ভারতের রাজধানীতে এখন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—যিনি ছাত্র আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন নয়াদিল্লিতে। তাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতি, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে।
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার সরকার হঠাৎ করে ভেঙে পড়ে। আন্দোলনে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যার দায়ভার নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠলে হাসিনা গোপনে দেশত্যাগ করেন এবং ভারতের শরণাপন্ন হন।
বর্তমানে তিনি দিল্লির একটি সুরক্ষিত সরকারি বাংলোতে অবস্থান করছেন। তার আশপাশে কড়া নিরাপত্তা, প্রবেশাধিকার সীমিত, এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর নজরদারি চলছে। এই অবস্থান আপাতদৃষ্টিতে রাজনৈতিক আশ্রয় বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুস, ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনার প্রত্যার্পণ দাবি করেছে। তাদের অভিযোগ—আন্দোলনের সময়কার সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় থেকে তিনি পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন।
তবে ভারতের জন্য বিষয়টি শুধু আইন বা নীতিগত সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি বড় রাজনৈতিক প্রশ্ন। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রত্যার্পণ চুক্তিতে বলা আছে, অনির্বাচিত বা অগণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষ থেকে আসা অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। ফলে ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তী প্রশাসনকে কেন্দ্র করে ভারত দ্বিধাগ্রস্ত।
জটিলতাটি আরও গভীর হয়েছে চীনের ভূমিকার কারণে। বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় চীন ইতোমধ্যেই নতুন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে শুরু করেছে। ভারতের জন্য এটি এক কৌশলগত সংকেত—শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে ঘিরে তাদের সিদ্ধান্তে আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যও প্রভাবিত হতে পারে।
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত শুধু এক সাবেক নেত্রীকে নিরাপদ রেখেছে তা নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশীয় রাজনীতির ভারসাম্য এখন তাদের কূটনৈতিক কৌশলের ওপর নির্ভর করছে। এই ভার কতদূর ভারসাম্যপূর্ণ রাখা সম্ভব হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
