১৪ লাখ টন বেশি উৎপাদন হওয়ার পরেও রংপুরের আলুর কেজি ৬৫ টাকা

আলুর রাজধানী বলে খ্যাত রংপুরে গত মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়েছিল। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। তবে এবার একটি সিন্ডিকেট চক্র ও দুটি বড় প্রতিষ্ঠান আগাম আলু কিনে হিমাগারে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় পণ্যটির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে বর্তমানে রংপুরেই ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে সেই আলু। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ৮০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে।
রংপুরের হিমাগারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আলু মজুত থাকলেও ভোক্তা অধিকার বা প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, আলুর রাজধানী বলে খ্যাত রংপুর জেলায় গত মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ৫৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিল। আলু উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে রংপুর জেলায় আলুর চাহিদা মাত্র এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। তাহলে ১৪ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত আলু উৎপাদনের পরও কেন আলুর রাজধানীতে রংপুরেই দাম কমছে না।
আলর দাম না কমার নেপথ্যে
আলুর মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্য অনুসন্ধান করতে রংপুরের ৪০টি হিমাগারের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে গিয়ে দেখা গেছে, এখনও বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারে মজুত আছে। আলুর পাইকাররা বলছেন, হিমাগারের থাকা বেশির ভাগ আলুর মালিক বড় ব্যবসায়ী, তাদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আলুর বিশাল মজুত করে রাখায় দাম কমছে না। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা পাইকাররা বলছেন, হিমাগার থেকে ৬২ থেকে ৬৩ টাকা কেজি দরে আলু কিনছেন তারা।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এই কর্মকর্তা বলছেন, আলুর বাম্পার ফলন হওয়া রংপুরের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ১৪ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হওয়ার পরও বাজারে দাম কমা উচিত।
সার্বিক বিষয়ে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এবার রংপুরে রেকর্ড পরিমাণ আলুর ফলন হয়েছে। কিন্তু দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ার নেপথ্যে চিহ্নিত সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে এবং হিমাগার থেকে আলু বের করার সময় বেঁধে দিলেই আলুর কেজি ৫০ টাকায় নেমে আসবে।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রংপুরের কার্যালয়ে গেলে দুই কর্মকর্তা অভিযানে বাইরে আছেন বলে জানালেন দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। তিনি বললেন, কয়েকদিন আগে ময়নাকুঠি এলাকায় একটি হিমাগারে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তা বললেন, রংপুরের ৪০টি হিমাগারের মালিককে যদি আলু বের করার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হলেই আলুর দাম কমে যাবে। এ জন্য প্রয়োজন জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর ভোক্তা অধিকারের সমন্বিত উদ্যোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *